হস্তশিল্পের ছোঁয়ায় কলেজ স্মৃতি: Government General Degree College, Nakashipara এর আর্কিটেকচারাল মডেল

ভূমিকা
শিল্পীর সৃষ্টি সবসময়ই জন্ম নেয় স্মৃতি আর ভালোবাসার মেলবন্ধন থেকে। কখনো সেটা হয়ে ওঠে প্রিয় মানুষকে ঘিরে, আবার কখনো প্রিয় কোনো প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে। ভালোবাসা থেকে কিছু গড়তে বসলে শিল্পী অজান্তেই হয়ে ওঠেন আবেগী। আমার ক্ষেত্রেও তেমনই—প্রতিটি কাজে আমি মিশিয়ে দিই অনুভূতির রঙ। আর যখন সেই সৃষ্টি আমার জীবনের কাছের কোনো মানুষ বা প্রতিষ্ঠানের জন্য হয়, তখন আবেগের গভীরতা যেন বহুগুণ বেড়ে যায়।
প্রায় নয় বছর আগে আমি আমার কলেজের একটি আর্কিটেকচারাল মিনিয়েচার মডেল তৈরি করেছিলাম এবং সেটি কলেজকে উপহার দিয়েছিলাম। সময়ের স্রোতে সেই মডেল হয়তো পুরনো হয়ে গেছে, আর যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে কিছুটা মলিন হয়েছে। তবু এর সাথে জড়িয়ে থাকা স্মৃতিগুলো আজও আমার কাছে অক্ষত ও উজ্জ্বল।
সম্প্রতি আবারও নতুন করে সেই মডেল তৈরি করলাম—এবার শিক্ষক দিবস উপলক্ষে। এটি কেবল একটি স্থাপত্যের প্রতিরূপ নয়; বরং আমার কলেজের সকল অধ্যাপক অধ্যাপিকা এবং শিক্ষা-কর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধার ছোট্ট এক নিদর্শন। আবারও উপহার দেওয়ার সিদ্ধান্ত আমার কাছে হয়ে উঠেছে গভীরভাবে আবেগঘন এবং অর্থবহ।
এই ব্লগে আমি শেয়ার করব আমার এই যাত্রার গল্প—মডেল তৈরির প্রতিটি ধাপ থেকে শুরু করে কলেজে আমাদের সম্মানিত OIC স্যারের হাতে সেটি তুলে দেওয়ার অনন্য মুহূর্ত পর্যন্ত। সেই সঙ্গে থাকবে নয় বছর আগের প্রথম মডেল বানানোর স্মৃতিচারণ এবং তার সাথে জড়িয়ে থাকা আবেগের কথাও।
একই সঙ্গে শিল্প আর আবেগের এই যাত্রায় আপনাদের আন্তরিক আমন্ত্রণ জানাই।
নতুন করে কেনো বানালাম
একই মানুষকে বা একই প্রতিষ্ঠানকে একই জিনিস দু’বার উপহার দেওয়ার বিষয়টা সচরাচর দেখা যায় না। তাই স্বাভাবিকভাবেই অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে—কেনো আবার একই ধরনের মডেল কলেজকে উপহার দিলাম?
প্রায় নয় বছর আগে, ২০১৬ সালে, আমি প্রথমবার আমার কলেজের একটি আর্কিটেকচারাল মিনিয়েচার মডেল তৈরি করেছিলাম। তখন আমি নিজেই কলেজের একজন ছাত্র। সেই সময়কার তৎকালীন OIC স্যার, ড. পার্থ কর্মকার মহাশয়ের হাতে মডেলটি তুলে দেওয়ার আনন্দ আজও মনে আছে। বহু বছর ধরে সেটি কলেজেই সংরক্ষিত ছিল। তবে সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন আসাটাই স্বাভাবিক। কোনো কাচের কভার না থাকায় মডেলটির ওপর ধুলো জমেছিল, ফলে তার সৌন্দর্য কিছুটা মলিন হয়ে গিয়েছিল। পাশাপাশি, গত কয়েক বছরে কলেজের মূল বিল্ডিংয়েরও কিছু আধুনিকিকরন হয়েছে—যার ফলে স্থাপত্যের আসল চেহারায়ও কিছুটা পরিবর্তন এসেছে।
প্রথম মডেলটি আমার কাছে ছিল একেবারে নতুন এক প্রচেষ্টা। সীমিত উপকরণ, অভিজ্ঞতার অভাব, আর হাতে সময়ের টানাটানি—সব মিলিয়ে সেই কাজের ভেতরে ছিল একধরনের কাঁচা কিন্তু খাঁটি আবেগের ছাপ। তখন শুধুই ভালোবাসা থেকে মডেলটি তৈরি করেছিলাম।
কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। গত নয় বছরে মডেল বানানোর অভিজ্ঞতা আমার হাতে অনেকখানি পরিণতি এনে দিয়েছে। তাই এবারের কাজের ভেতর শুধু আবেগই নয়, সেই অভিজ্ঞতার ছাপও রেখেছি। ভালোবাসা, স্মৃতি আর শেখা দক্ষতার সমন্বয়ে তৈরি হয়েছে কলেজের নতুন আর্কিটেকচারাল মিনিয়েচার মডেল।
তবে এটাও সত্যি, এই মডেলের ভেতরেও অনেক ত্রুটি আছে। নিখুঁত বলা যাবে না একে। কিন্তু এটা ছিল আমার নিজের কাছে দ্বিতীয় সুযোগ—আগের থেকে কিছুটা ভালো কাজ করার, এই কয়েক বছরে অর্জন করা অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আরও এক ধাপ উপরে ওঠানো নিজের বানানো মডেলটিকে।
👉 আর ঠিক এই জায়গা থেকেই মনে পড়তে থাকে সেই প্রথম মডেল বানানোর অভিজ্ঞতার কথা—যার প্রতিটি মুহূর্ত আজও আমার কাছে অমূল্য স্মৃতি হয়ে রয়ে গেছে।
আগের মডেলের স্মৃতি
২০১৬ সাল। আমি তখন কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র। ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হতেই মাথায় ঘুরছিল একটাই চিন্তা—কলেজ বিল্ডিংয়ের একটা ছোট্ট প্রতিরূপ তৈরি করা যায় কি না। কলেজের প্রতিটি কোণা, প্রতিটি করিডর, প্রতিটি ক্লাসরুম তখন এতটাই চেনা হয়ে গিয়েছিল যে চোখ বন্ধ করলেই সবটা স্পষ্ট দেখতে পেতাম। তাই কোনো প্রফেশনাল ব্লুপ্রিন্ট ছাড়াই, কেবল নিজের অভিজ্ঞতা আর কল্পনাকে ভিত্তি করেই শুরু করেছিলাম মডেল তৈরির নকশা আঁকা।
সেই সময় পর্যন্ত কলেজ বিল্ডিং ছিল দুই তলা। সেপ্টেম্বর মাসে যখন আমার কাজ শুরু করেছিলাম দুই তলার হিসেব করে। কিন্তু সেই সময়েই দেখি কলেজ বিল্ডিং এ কাজ শুরু হয়েছে—যোগ হবে তৃতীয় তলা। তাই আমিও সিদ্ধান্ত নিলাম আমার মডেলটাও হবে তৃতীয় তলা তাই আমার কাজের মাঝপথে বড় পরিবর্তন এসে গেল। প্রথমে একটু জটিল মনে হলেও, শেষ পর্যন্ত কিছুটা সৃজনশীল সিদ্ধান্ত আর সামান্য পরিবর্তন এনে আমার মডেলটিতেও যুক্ত করলাম নতুন তলাটি।
পুরো কাজের মূল উপকরণ ছিল কাঠের টুথপিক, কাগজ এবং আঠা। প্রতিটি কাঠি আলাদা করে কেটে সিট বানাতাম, তারপর মেপে মেপে জোড়া লাগিয়ে ধীরে ধীরে দাঁড় করিয়েছিলাম আমার কলেজের ক্ষুদ্র প্রতিরূপ। প্রায় দুই মাসের প্রচেষ্টায় ২০শে নভেম্বর সম্পূর্ণ হয়েছিল সেই আর্কিটেকচারাল মডেল।
এরপর শুরু হলো প্রতীক্ষা—কবে সেটা হাতে তুলে দেব কলেজের OIC স্যার, ড. পার্থ কর্মকার মহাশয়কে। অবশেষে ডিসেম্বর মাসে নবীনবরণ ও সামাজিক অনুষ্ঠানের মঞ্চে সেই স্বপ্নের দিনটা এলো। অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার পরপরই স্যারের হাতে তুলে দেওয়া হলো মডেলটি। মুহূর্তটা ছিল অবিশ্বাস্যভাবে আবেগময়—শুধু আমার জন্য নয়, আমার সেই সময়কার বন্ধুদের কাছেও। কারণ, যদিও মডেলটা আমার হাতে তৈরি হয়েছিল, কিন্তু আমি সেটিকে উপহার দিয়েছিলাম আমাদের সবার পক্ষ থেকে।
সেই ছোট্ট মডেল ঘিরে অসংখ্য স্মৃতি আজও ভেসে ওঠে—হাসি, উচ্ছ্বাস, বন্ধুত্ব আর অদ্ভুত এক গর্বের অনুভূতি। তাই দ্বিতীয়বার মডেল বানানোর সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে মনে হয়েছিল, হয়তো পুরোনো স্মৃতিগুলোতে হাত দেওয়া ঠিক হবে না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত স্থির করলাম, পুরোনো মডেলটা আমি নিজের কাছে রাখব স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে, আর কলেজকে নতুন করে উপহার দেবো আরও পরিণত, অভিজ্ঞতা-সমৃদ্ধ, আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে তৈরি করা এক নতুন আর্কিটেকচারাল মিনিয়েচার মডেল।


নতুন মডেল তৈরি করার যাত্রা




শুরুতে আমার ভাবনা ছিল, আগের বানানো মডেলটা বাড়ি নিয়ে এসে ভালোভাবে পরিষ্কার করে কাচের বক্সে সাজিয়ে আবার কলেজে দিয়ে আসব। কিন্তু মডেলটা ভালো করে দেখার পর বুঝলাম—সে সময় যতটা রিসোর্স এবং অভিজ্ঞতা নিয়ে মডেল বানানোর চেষ্টা করেছি, তাতে অনেক ভুল রয়ে গেছে। মনে হলো, যদি আরেকবার বানানোর সুযোগ পাই তবে এই ভুলগুলো এড়িয়ে আরও নিখুঁত কিছু বানানো সম্ভব।
তাই দ্বিধার মধ্যেই নিজেকে দ্বিতীয় সুযোগ দিলাম। শুরু হলো একেবারে নতুন করে মডেল বানানোর যাত্রা।
২০শে আগস্ট, ২০২৫। কলেজের বর্তমান OIC স্যার, ড. বিনায়ক চন্দ্র মহাশয়ের অনুমতি নিয়ে পুরোনো মডেলটা আমি বাড়ি নিয়ে আসি। আর সেদিন রাত থেকেই শুরু হয়ে যায় নতুন মডেল তৈরির কাজ।
🛠 ব্যবহৃত উপকরণ
আমি সবসময় ন্যাচারাল জিনিস দিয়েই কাজ করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। প্লাস্টিক যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলাই আমার লক্ষ্য। তাই এবারের প্রজেক্টের জন্যও মূল উপকরণ ছিল—
- কাগজ
- কাঠের টুথপিক
- আঠা
এর পাশাপাশি কিছু বিশেষ উপাদান দরকার হয়েছিল—
- MDF বোর্ড ও প্লাইউড (বেস তৈরির জন্য)
- ভিনাইল স্টিকার (বেসকে সুন্দর করার জন্য)
- কাচ (মডেলকে ধুলো থেকে রক্ষা করার জন্য বক্স তৈরির কাজে)
⏳ সময় ও পরিশ্রম
- প্রায় ৭,০০০+ কাঠি ব্যবহার হয়েছে
- প্রতিদিন গড়ে ৪–৬ ঘণ্টা করে কাজ করেছি
- একেবারে শুরু থেকে কাঁচের বক্সে রাখা পর্যন্ত সময় লেগেছে প্রায় ১৫ দিন
🎥 মডেল তৈরির সাথে ভিডিও জার্নি
আমার কলেজ আমাকে ছাত্রজীবন থেকেই সবসময় নতুন কিছু করার অনুপ্রেরণা দিয়েছে। কলেজের সঙ্গে যুক্ত কোনো কাজ শুরু করলেই যেন একরাশ নতুন আইডিয়া মাথায় ভিড় করে আসে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
শুধু মডেল বানিয়েই থেমে থাকিনি—পুরো প্রক্রিয়াটাকে আমি ছোট ছোট ভিডিও আকারে রেকর্ড করেছি। প্রতিটি ধাপে ধাপে সেই ভিডিওগুলো যেন আমার যাত্রার সাক্ষী হয়ে উঠেছে। আর সেগুলোই পরে আপলোড করেছি সোশ্যাল মিডিয়ায়, যাতে অন্যরাও দেখতে পারে কীভাবে ধৈর্য আর ভালোবাসা দিয়ে একটা মডেল ধীরে ধীরে জীবন্ত হয়ে ওঠে।
👉 YouTube Playlist: Mini Craft Vlog – College Model
👉 FB Playlist: Mini Craft Vlog – College Model
আরও এ ধরনের ভিডিও ও আমার ক্রাফট জার্নি দেখতে চাইলে ফলো করতে পারেন—
📌 YouTube: @arnabbasu513 & @upahar18
📌 FB/IG: @arnabbasu513 & @upahar18
এই মডেলটা আমার কাছে শুধু একটা প্রজেক্ট নয়, বরং আমার শেখার পথচলার আরেকটি অধ্যায়।

নিজের কাজের আত্মবিশ্লেষণ ও নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন
আমার নিজের পর্যবেক্ষণে মনে হয়েছে, এবারের মডেল আগের বারের তুলনায় অনেক বেশি উন্নত মানের হয়েছে। আগের কাজটা ছিল অনেকটাই বেসিক লেভেলের, কিন্তু এবারের কাজের ভেতরে এসেছে তুলনামূলকভাবে বেশি নিখুঁততা। ডিজাইনের সূক্ষ্মতা বজায় রাখা, সঠিক স্কেল মেনে চলা, পিলার–জানলা–দরজার অবস্থান ও মাপ নির্ভুলভাবে বসানো—এসবের ফলে পুরো কাজের মান অনেকটাই বেড়ে গেছে। আগের আর এখন কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু পার্থক্য আছে।
মূল পার্থক্যগুলো হলো—
-
ব্লুপ্রিন্ট ও ডেটা: আগের মডেল কোনো ডেটা ছাড়াই বানিয়েছিলাম। এবারে যথেষ্ট ডেটা, মাপঝোক আর পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করেছি।
-
টুলসের ব্যবহার: আগে শুধু কাঁচি ব্যবহার করেছিলাম, এবার কাঁচির পাশাপাশি মেশিন দিয়ে কিছু অংশ কেটেছি। ফলে মডেলের কোনাগুলো আরও নিখুঁত ও ক্লিন ফিনিশড হয়েছে।
-
মনোনকুঞ্জের সংযোজন: আগের মডেলের সাইজ ছোট হওয়ায় কলেজের সামনের মনোনকুঞ্জটাকে যুক্ত করতে পারিনি। এবারে বড় সাইজে বানানোর কারণে সেটি অন্তর্ভুক্ত করতে পেরেছি, যা Government General Degree College, Nakashipara (অর্থাৎ প্রাক্তনীদের কাছে Muragachha Government College)-এর পূর্ণ রূপকে সুন্দরভাবে তুলে ধরে।
এর পাশাপাশি এবারে নতুন অভিজ্ঞতা হয়েছে কাচের বক্স তৈরি করা।
মডেল যাতে ধুলো-ময়লা থেকে সুরক্ষিত থাকে, সেই ভাবনা থেকেই কাচের বক্স বানানোর সিদ্ধান্ত নিই। আমার বন্ধু মনোজিত দত্তের সহায়তায় আমরা একসাথে এই বক্স তৈরি করি। আগে এর কোনো অভিজ্ঞতা না থাকলেও এখন পুরো প্রক্রিয়াটা শিখে নিয়েছি। ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রজেক্টে আমি নিজেই কাচের বক্স বানিয়ে দিতে পারব।
সব মিলিয়ে, এই প্রজেক্ট আমার কাছে শুধু একটি শিল্পকর্ম নয়, বরং আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তোলারও মাধ্যম। পরিচিত জায়গার ক্ষুদ্র সংস্করণ বানাতে গিয়ে মনে হয়েছে, ভবিষ্যতে অর্ডার-ভিত্তিক মডেল তৈরির কাজও নিশ্চয়ই এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব।

এবারে উপহার দেওয়ার অভিজ্ঞতা


এবারের শিক্ষক দিবস আমার কাছে একেবারেই অন্যরকম ছিল। ২০২৫ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর, কলেজে আয়োজিত শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে আমি নতুন করে তৈরি করা কলেজের আর্কিটেকচারাল মডেলটি উপহার হিসেবে দিয়েছি—শুধু কলেজ নয়, কলেজের সকল অধ্যাপক-অধ্যাপিকা এবং নন-টিচিং স্টাফদের উদ্দেশে।
আগেরবার একজন ছাত্র হিসেবে আমি ও আমার কয়েকজন বন্ধু মিলে একটি মডেল কলেজকে উপহার দিয়েছিলাম। কিন্তু এবারের অভিজ্ঞতা একেবারেই ভিন্ন। এবার আমি কলেজের Alumni Association-এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে এই উপহারটি দিতে পেরেছি। তাই এটি আর আমার ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা নয়, বরং পুরো Alumni Association-এর পক্ষ থেকে কলেজের প্রতি আমাদের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার প্রতীক।
অনুষ্ঠানের শুরু হয় প্রদীপ জ্বালানো, ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণের ছবিতে মাল্যদান ও পুষ্পার্পণের মধ্য দিয়ে। এরপর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়, তারপর বর্তমান ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষকমণ্ডলীর হাতে উপহার তুলে দেয়। সবশেষে Alumni Association-এর তরফ থেকে আমি এই মডেলটি উপহার দিই। আমি বিশেষভাবে অনুরোধ করি আমাদের OIC স্যার, ড. বিনায়ক চন্দ্র মহাশয়কে, যেন তিনি উপহারের কভারটি সরিয়ে সবার সামনে মডেলটি উন্মোচন করেন।
স্যার কভার খোলার সঙ্গে সঙ্গেই উপস্থিত অধ্যাপক-অধ্যাপিকা, ছাত্রছাত্রী সকলেই মডেলটি দেখে আনন্দে অভিভূত হন। প্রায় প্রত্যেকেই এসে আমাকে বলেছেন—মডেলটি খুব সুন্দর হয়েছে এবং কলেজের মূল বিল্ডিংয়ের সঙ্গে একেবারে মিলিয়ে ফেলতে পেরেছেন।
অনুষ্ঠান শেষে আমি এবং আরও কিছু প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্র মিলে এই বিশেষ উপহারটি প্রিন্সিপালের অফিসের নির্দিষ্ট জায়গায় রেখে আসি।
এ দিন সবার কাছ থেকে পাওয়া প্রশংসা আর ভালোবাসা আমার কাছে নিঃসন্দেহে এ বছরের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।


উপসংহার
এই ধরনের মডেল বানানো আমার কাছে শুধু একটি আর্ট প্রজেক্ট নয়, বরং এক ধরনের যাত্রা।
হয়তো এই কারণেই বলে—জীবনে সবাইকে দ্বিতীয় সুযোগ দেওয়া উচিত। আমি নিজের হাতে সেই প্রমাণ পেয়েছি। নিজেকে দ্বিতীয়বারের জন্যে সুযোগ দিলাম মডেল বানানোর জন্যে, আর আগের মডেলটার থেকে এবারেরটা আরও ভালোভাবে তৈরি করতে পারলাম।
👉 এই বিষয়ে আপনার মতামতও জানতে চাই—কমেন্টে জানাতে পারেন, আগের মডেলটা নাকি এবারেরটা আপনার কাছে বেশি ভালো লেগেছে।
নতুন করে মডেল তৈরির পথে আগের ভুলগুলো শুধরে নিয়েছি। আর এবার যেসব জায়গায় মনে হচ্ছে আরও উন্নতি করা যেত, সেগুলো আমি পরের কোনো প্রজেক্টে আরও নিখুঁতভাবে করার চেষ্টা করব।
এই মডেল আমার কাছে সবসময় বিশেষ হয়ে থাকবে। কারণ এর ভেতরে আছে আমার ছাত্রজীবনের স্মৃতি, হাতে-কলমে শেখা অভিজ্ঞতা, আর প্রিয় প্রতিষ্ঠানকে কৃতজ্ঞতা জানানোর অনন্য আনন্দ।
আপনিও কি চান নিজের জন্য মিনিয়েচার মডেল?
আপনি যদি আপনার নিজের জন্য, কাউকে উপহার দেওয়ার জন্য, ঘর সাজানোর জন্য, অথবা প্রিয় প্রতিষ্ঠানকে সম্মান জানানোর জন্য এ ধরনের আর্কিটেকচারাল মিনিয়েচার মডেল বানাতে চান—তাহলে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আপনার চাহিদা অনুযায়ী আমি মডেল তৈরি করে দেব।
🛒 এছাড়াও আমাদের অনলাইন স্টোর Upahar18-এ পাবেন নানা ধরণের হ্যান্ডক্রাফট প্রোডাক্ট ও কাস্টমাইজড প্রিন্ট প্রোডাক্ট। আমরা সারা ভারতে ডেলিভারি করি।
👉 শেষে আবারও মনে করিয়ে দিই—আমার এই ক্রাফট জার্নি আরও কাছ থেকে দেখতে ও জানতে চাইলে আমার এবং Upahar18-এর সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্টগুলো ফলো করতে ভুলবেন না। ভবিষ্যতেও অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ব্লগের মাধ্যমে আমি আমার হ্যান্ডক্রাফটের গল্প, ইমোশন আর অভিজ্ঞতা সবার সাথে শেয়ার করে যাবো।